শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে জেলার মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজ সাজ রব। প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন ইতোমধ্যে। এ বছর ৫টি উপজেলায় এ বছর ৪৩৯ মন্ডপে চলছে পূজার প্রস্তুতি। গত বছরের চেয়ে এ বছর মন্ডপের সংখ্যা ৬টি কম হয়েছে বলে জানান মাদারীপুর জেলা সভাপতি অধ্যাপক প্রানতোষ মন্ডল। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে পূজা নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে চার স্তর বিশিষ্ঠ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
চলতি বছর জেলার সর্বাধিক পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজৈর উপজেলায়। এ বছর রাজৈর উপজেলায় ২৬২টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও জেলার শিবচরে ৪০টি, কালকিনিতে ৪১টি, ডাসারে ২৩টি ও সদরে ৭১টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারন মন্ডপের সংখ্যা নির্ধারন করেছে। জেলার অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপের সংখ্যা ৮৮টি, গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপের সংখ্যা ১১৭টি ও সাধারণ মন্ডপের সংখ্যা ২৩০টি। ইতোমধ্যেই মন্ডপের প্রতিমাগুলোতে মাটিরকাজ শেষে চলছে রং তুলি আর সাজ সজ্জার কাজ। তবে অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে। একেক মন্দিরে ভিন্ন ভিন্ন সাজে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা। যার যেমন সাধ্য সে মতে চলছে সাজসজ্জা। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সফল ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপশি পুজা কমিটিও কাজ করে যাচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজারী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েক দফা মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। মন্ডপের তালিকা করে চলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অনুদান বরাদ্দের কাজ। অধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করবে বলে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জানা গেছে। এবার প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামুলক করেছে প্রশাসন। পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানালেন পূজারীরা।
মাদারীপুর পৌর এলাকার চরমুগরিয়া সার্বজনীন শ্রীশ্রীকালি মন্দির কমিটির সহসভাপতি অসিম কুমার বিশ^াস বলেন, ‘শত বছর যাবৎ মহাধূমধামের সহিত তারা শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন। এ বছরও মহাধূমধামে মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ পূজায় সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়।’
মাদারীপুরে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের বিশ^জিৎ হালদার জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও আমরা মহাধূমধামের সহিত মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের মন্দিরে ঢাকের তালে, ধূনচি নাচ, শঙ্খধ্বণি প্রতিযোগিতা, উলুধ্বণি প্রতিযোগিতা, শ্রীশ্রীচন্ডীপাঠ প্রতিযোগিতা, শ্রীমদ্ভগবদ গীতাপাঠ প্রতিযোগিতা ও ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।’ মাদারীপুর পৌর এলাকার শহীদ মানিক সড়কের সাথে আমিরাবাদ ২১৬ বছরের প্রাচীন বলরাম দেব মন্দিরের প্রতিমা গড়ার কারিগর মনোরঞ্জন ঢালী জানান, গত বছর তিনি ১৩খানা প্রতিমা তৈরি করেছেন। এ বছরও তিনি ১৩ খানা দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন। এই মন্দিরে বিগত ১৫০ বছর ধরে দুর্গাপুজা হয়ে আসছে। মাদারীপুর পুরান বাজার শ্রীশ্রী রাধা-গোবিন্দ মন্দিরের পুরোহিত পরেশ অধিকারী জানান, মহালয়ার মধ্য দিয়ে শ্রীশ্রীদুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আগামী ২৮সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৫দিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের ব্যাপক আয়োজন চলবে। মায়ের পূজা ঢাকের তালে অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটবে। মা এবার আসছেন গজে এবং যাবেন দোলায় চড়ে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক প্রানতোষ মন্ডল জানান, ‘এবছর মাদারীপুর জেলায় ৪৩৯ খানা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশপ্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথেও মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।’
মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা (পিপিএম) জানান,‘শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে চারস্তর বিশিষ্ট কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পোষাকধারী পুলিশ, ডিবি পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, সেনাবহিনীসহ প্রতিটি পূজামন্ডপে আইনশৃংখলা রক্ষার্থে মন্দিরকমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি আনসার থাকবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর শারদীয় দুর্গোৎসব আরো ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply