গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি, মন্ত্রণালয়ের চিঠি জালিয়াতি করে নিকাহ রেজিস্ট্রার, মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে অঢেল অর্থ-সম্পদ অর্জনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগের বিষয় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন লিয়াকত সরদার নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে জানা গেছে, মাওলানা মো. রুহুল আমিন ২০০০ সালে সহকারী মৌলভী পদে মাদাসাটিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০০১ সালে মাদ্রাসাটি এমপিওভূক্ত হয়। নিয়োগ প্রবিধান অনুযায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের শর্ত হল-প্রথম শ্রেণির কামিল ডিগ্রিসহ সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণি/বিভাগ অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির কামিল ডিগ্রিসহ আরবি/ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার্স ডিগ্রিসহ সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। এছাড়া কোন দাখিল মাদ্রাসায় ৮ বছর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অথবা মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসেবে ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু তিনি সহকারি মৌলভী হিসেবে ২০০০ সালে প্রথম যোগদান করেন। তিনি দাখিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ, আলিমে দ্বিতীয় বিভাগ এবং ফাজিলে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অথচ তিনি নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে ২০০৪ সালে ফাজিল স্তরে প্রভাষক পদে পদোন্নতি এবং ২০০৯ সালে অধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন।
এছাড়া মাওলানা মো. রুহুল আমিন সহকারি মৌলভী, প্রভাষক ও অধ্যক্ষ পদে পদায়নকালে বেআইনীভাবে নভেম্বর-২০০৪ হতে অক্টোবর-২০১০ পর্যন্ত ৫ বছর ১১ মাসের সরকার প্রদত্ত বেতন-ভাতা সর্বমোট ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি ১৩.০৯.২০০৩ তারিখের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (বিচার শাখা-৭) এর ১২৮৭/বিচার-৭/২ এন-৩৬/৭৬ নং স্মারকের সহকারি সচিব কর্তৃক আদেশ বলে অবৈধভাবে মুকসুদপুর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অস্থায়ী নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আদেশের চিঠি জালিয়াতি করে কাজির দায়িত্ব পালন করছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে এসব ওয়ার্ডে নিজে দায়িত্ব পালন না করে ভাড়াটিয়া একাধিক লোক দিয়ে এসব কাজ করিয়ে থাকেন তিনি। এসব লাইসেন্সবিহীন লেখকদের মধ্যে রয়েছে-মোস্তাফিজুর রহমান, আমিনুর ইসলাম, ইব্রাহীম শেখ, মো. নাঈম, মো. ছলেমান মাসুদ শেখ।
এদিকে, অধ্যক্ষ মাওলানা মো. রুহুল আমিন মাদ্রাসার বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব অবৈধ টাকা দিয়ে মুকসুদপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর বাসস্ট্যান্ড রাস্তা সংলগ্ন ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর রাজার বাজার এলাকায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, নারায়নপুর বটতলা রাস্তা সংলগ্ন ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন। যেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এছাড়া মাও. মো. রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ অর্থ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদ রয়েছে। রুহুল আমিনের ‘রুয়ামা সার্বিক গ্রামীন উন্নয়ন সমিতি’ নামে এলাকাভিত্তিক একটি সমবায় সমিতিও রয়েছে। এছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, আলফাডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এসব অভিযোগের বিষয় অধ্যক্ষ মাওলানা মো. রুহুল আমিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগের অস্বীকার করে বলেন, ‘এ রকম অভিযোগ প্রায় হয়। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রয়োজনে সরেজমিনে এসে তদন্ত করে দেখতে পারেন।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রামপ্রসাদ মন্ডল বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply