বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্যের অন্যতম হচ্ছে শরৎ কাল। শরৎকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাশফুল। এই কাশফুলের গরম ছোয়া, সাদা শুভ্রতা ও সাদা মেঘের ভেষে যাওয়ার দৃশ্য সবারই মন কেড়ে নেয়। তেমনি মাদারীপুরেও বেশ কয়েকটি জায়গায় কাশফুল দেখতে মানুষজন ভীড় করছেন।
খোজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার হাজরাপুরের ‘মাদারীপুর হাউজিং এষ্টেট’ নামের বিশাল এলাকাজুড়ে ও মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কের মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর এলাকার বিসিক শিল্প নগরীর বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে দিগন্তজোড়া কাশবন। বিভিন্ন জায়গায় কাশফুল ফুটলেও এই দুইটি স্থান উল্লেখ্যযোগ্য। এসব জায়গায় ইতিমধ্যে কাশফুল ফুটছে শুরু করেছে। তাই মাদারীপুরের এই দুটি জায়গায় প্রতিদিনই সৌন্দর্য পিপাসু অসংখ্য মানুষ ছুটে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিনে ভীর বেশি হয়। এছাড়াও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি টিকটকারদের আনাগোনাও লক্ষ্যনীয়। পাশাপাশি অনেকেই কনটেন্ট বানাতেও ছুটে যাচ্ছেন এই মনোমুগ্ধকর কাশবনে।

খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খা ও কুমার নদের পাড়েও কাশবন রয়েছে। এছাড়াও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, কাঠালবাড়ি, বন্দরখোলা, সন্যাসীর চর ইউনিয়নে পদ্মা নদী ও আড়িয়াল খা নদের তীরজুড়ে কাশবন দেখা যায়।
এইসব জায়গায় প্রতিদিন বিকেল হলেই অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ছোট শিশু হতে শুরু করে সব বয়সের মানুষকেই এইসব জায়গায় ঘুরতে আসতে দেখা যায়। সবাই পরিবারকে নিয়ে কাশবনের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার অনেকেই কাশফুল ছিড়ে মুঠো ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার প্রিয়জনদের কাশফুল উপহারও দিচ্ছেন। এতে করে মনে হয় প্রতিদিনেই প্রকৃতি প্রেমীদের মিলনমেলা হচ্ছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার ‘মাদারীপুর হাউজিং এষ্টেট’ এলাকার কাশবনে ঘুরতে আসা বিএম হাফিজুর রহমান বেপারী সানি বলেন, আমার বাড়ি রাজশাহীতে। মাদারীপুর শহরের শকুনি এলাকায় আমার শশুরবাড়ি। গত সপ্তাহে শশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে জানতে পেরেছি খুব সুন্দর কাশবন আছে। তাই পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এই প্রথম এখানে এসেছি। খুব ভালো লেগেছে। কাশফুলের সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবেই। এখানকার কাশবনের পুরো অংশজুড়ে এখনও ফুল ফোটেনি। পুরোটা ফুটলে আরো সৌন্দয্য বেড়ে যাবে।
এখানে ঘুরতে আসা আরেকজন মাহিম বলেন, আমি প্রতি শুক্রবার এখানে ঘুরতে আসি। খুবই সুন্দর জায়গা। এখানে শহর থেকেও অনেক মানুষজন ঘুরতে আসেন, ছবি তোলেন, অনেক মজা করেন।

আরেক ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মো. শাখাওয়াত হোসেন মামুন বলেন, আমি ও আমার নব্য বিবাহিত নতুন বউকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। আমরা ভাবতেই পারিনি এতো সুন্দর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করবো। এতো সুন্দর পরিবেশে সাদা কাশফুল আর নীল আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তাই নতুন জীবনের সঙ্গীকে নিয়ে এই সুন্দর দৃশ্যগুলোর ছবি তুলে স্মৃতি করে রেখে দিলাম।
মাদারীপুর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকতা মো. আল-আমিন বলেন, মাদারীপুরের আড়িয়াল খা ও কুমার নদের পাড়ে কাশবন আছে। তবে মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়ার ‘মাদারীপুর হাউজিং এষ্টেট’ এলাকা ও মহিষেরচর এলাকার বিসিক শিল্প নগরীতে যে কাশবন আছে, তা বিশাল এলাকাজুড়ে। এই দুটি স্থানে শরৎকাল এলেই কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য মানুষজন ভীর করেন। কাশবন শুধু প্রকৃতি প্রেমীদের মনে তৃপ্তি আনে তা নয়, এটি পরিবেশের জন্যই উপকারী। নদীর পারে যে কাশবন থাকে, তা অনেক সময় নদী ভাঙন থেকেও রক্ষা করে থাকে। সেই সাথে কাশফুল শুকিয়ে গেলে তা জ¦ালানি হিসেবেও অনেকেই ব্যবহার করেন।
Leave a Reply