মাদারীপুরের কালকিনিতে আড়াই’শ বছরের কুন্ডুবাড়ির মেলা নিয়ে টানাপোড়েন। সিদ্ধান্তহীনতায় উপজেলা প্রশাসন। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন একদফা মতবিনিময় সভা করেও শনিবার সকাল (১৮ অক্টোবর) পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। তবে মেলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার সিদ্ধান্ত দিবেন বলে জানিয়েছেন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ উল আরেফিন।
এলাকাবাসী ও প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, কালকিনির কুন্ডুবাড়ির মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে স্থানীয় জনতার ব্যানারে প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের অংশ গ্রহণে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলার কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা গোলাম হোসাইন ও মাওলানা মহাসিন হোসেন প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী কুন্ডুবাড়ি মেলাকে ঘিরে এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও মাদক বিক্রির মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়ে যায়। তাই তারা মেলাটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানান। এ সময় তারা আরো বলেন, কুন্ডুবাড়িতে পূজা চলবে, কিন্তু মেলা করা যাবে না। তাই এই মেলা স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবিতে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিকে প্রতি বছরের মতো চলতি বছরেও মেলা বসানোর পক্ষে উপজেলা ও পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদ। কুন্ডুবাড়ির মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন অনড়। পরে এ বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে টানাপোড়েন দেখা দিলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ-উল আরেফীনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন কালকিনি থানার ওসি কে এম সোহেল রানা, আলেম সমাজের কর্ণধর মাওলানা আব্দুল বারি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক বেপারী, সাধারন সম্পাদক মাহাবুব হোসেন মুন্সী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মাদারীপুর-৩ আসনের মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মো. মিজানুর রহমান বেপারী, পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামা প্রসাদ পাল, ভবতোষ দত্ত ভজনসহ প্রায় শতাধিক লোকজন। এসময় উভয় পক্ষের আলোচনা শেষেও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।
পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামা প্রসাদ পাল বলেন, এই মেলা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। প্রায় আড়াই’শ বছর পূর্ব থেকে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কুন্ডুবাড়ির মেলা অনুষ্ঠিত না হলে এই অঞ্চলের গরিব-অসহায় মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ক্রয় করতে পারতেন না। কারন এই মেলার মালামাল সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষতার মধ্যে থাকে। তাই আমি আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য মেলাটি প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরেও অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি আসা রাখি।’
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মেলা উপলক্ষে আসা ব্যবসায়ী মো. ফার“ক প্রামানিক বগুড়া কসমেটি, মিয়া শাহিদার বগুড়া খেলনা দোকান, সুমন সরদার নওগাঁ খেলার দোকান, মের“ল শাহিদার বগুড়া খেলনা দোকান, সামছু পরামানিক ঢাকা চশমার দোকান, সোহেল সিকদার কুটির শিল্প দোকান নোয়াখালী, রাসেল পরামানিক দিনাজপুর লোহার পণ্য দোকান, হাসান তালুকদার কুটির শিল্প দোকান রাজশাহী, শরীফ পরামানিক খেলা দোকান দিনাজপুর, সিরাজুল ইসলাম নোয়খালী খেলনা দোকান, সুমন তালুকদার শরীয়তপুর খাবার দোকান ও রকিব পরামানিক পোশাকের দোকান জয়পুরহাটসহ প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের বাব-দাদারাও এই মেলায় আসছে এবং আমরাও প্রায় ৪০বছর যাবত আসছি। বর্তমানে এই মেলা নিয়ে যে দ্ব›দ্ব রয়েছে তার একটা সমাধান চাই। কারন এই মেলা না মিললে আমাদের পরিবারের না খেয়ে থাকতে হবে।’
কালকিনি থানর ওসি কে এম সোহেল রানা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এসপি স্যারের নির্দেশক্রমে আমি সর্বোচ্ছ সতর্কভাবে কাজ করবো।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফ-উল আরেফীন বলেন, ‘মেলা নিয়ে দুই পক্ষের মতামত আমি জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে লিখিত আকারে পাঠাবো। এই মেলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যার ও জেলা পুলিশ সুপার সিদ্ধান্ত নিবেন।’
উল্লেখ্য: কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুন্ডুবাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দিপাবলী ও শ্রীশ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডু বংশের নামানুসারে এই মেলার নামকরণ করা হয় কুন্ডবাড়ির মেলা। সেখান থেকে প্রায় আড়াই’শ বছর ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
Leave a Reply