মাদারীপুরে আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী সানজিদা আক্তার দীপ্তিকে (১৭) ধর্ষনের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেন খানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশও দেয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের এই রায় প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্ত সাজ্জাদ হোসেন খান (৫৫) সদর উপজেলার পূর্ব খাগদী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম খানের ছেলে। নিহত মাদ্রাসাছাত্রী সানজিদা আক্তার দীপ্তি সদর উপজেলার চরনাচনা গ্রামের হাজী মো. মজিবর ফকিরের মেয়ে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের বাবা মজিবর ফকির দীপ্তির লাশ হিসেবে শনাক্ত করেন। এই ঘটনায় সদর মডেল থানায় ১৫ জুলাই অজ্ঞাতদের আসামি করে ধর্ষণ শেষে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেফতার করা হয় ইজিবাইক চালক সাজ্জাদকে। আদালতে তোলা হলে, দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সাজ্জাদ। এ সময় গ্রেফতারকৃত আসামি জানান, ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বৃষ্টির মধ্যে শহরের ইটেরপুল থেকে চরমুগরিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাজ্জাদের ইজিবাইকে ওঠে ওই মাদ্রাসাছাত্রী। অন্য কোনো যাত্রী না থাকায় ব্যক্তিগত কাজ আছে জানিয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে সাজ্জাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মেয়েটিকে ঘরের ভেতর আটকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ইজিবাইক চালক। বিষয়টি কেউ না জানতে পারে সেজন্য দীপ্তির মরদেহে ইট বেধে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে রাখে সাজ্জাদ। পরে ঘটনার দুইদিন পর লাশটি পুকুরের পানিতে ভেসে উঠলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় সদর মডেল থানা পুলিশ। লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর সাজ্জাদকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম। এই ঘটনায় ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করেন আদালত। আইনী প্রক্রিয়া ও যুক্তিতর্ক শেষে আসামির মৃত্যুদন্ড প্রদান করে আদালত। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলার বাদী ও নিহতের বাবা হাজী মো. মজিবর ফকির বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে সাজ্জাদ। আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট। আমি চাই দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।
রাস্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট শরীফ সাইফুল কবির জানান, ‘সাজ্জাদ তার কমের্র সাজা পেয়েছে। আদালতে রাস্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনা প্রমান করেছে। এই রায়ের মাধ্যমে অন্য অপরাধীরাও এমন ঘটনার আর ঘটাতে সাহস পাবে না। দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করে ২০১১ সালে মুক্তি পান ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেন খান। এরপর আবারো ২০১৯ সালের ১১ জুলাই মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণ শেষে হত্যা করে সে।
Leave a Reply